হিযবুত তাহরীরের কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হলেও কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেনি নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি। হুঁশিয়ারি উপক্ষো করেই শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি পল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে এলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় তাদের।
এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সামনের রাস্তায় জড়ো হন হিজবুত তাহরীরের সমর্থকরা। এ সময় তারা ‘মুক্তির একপথ, খিলাফত খিলাফত’ স্লোগানে মার্চ শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলেও তাদের ঠেলে হিজবুত তাহরীরের লোকজন এগিয়ে যেতে থাকে।মিছিলটি পল্টন মোড়ে গেলে পুলিশ তাদের আটকাতে পারেনি।
পরে বিজয়নগর পানির পাম্প মোড় প্রদক্ষিণ করে পল্টনের দিকে এগোলে পুলিশ দুই রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। সেই টিয়ারশেল উপেক্ষা করে মিছিলটি পল্টন ময়দানে গেলে পুলিশ তিনটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। একপর্যায়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটাও করা হয়। এ সময় সেনাসদস্যরা বেশ কয়েকজনকে আটক করেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন কয়েকজন।
পুলিশের রমনা বিভাগের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় হিযবুত তাহরীরকে বাধা দেওয়া হয়নি।কেননা সেখানে অনেক মুসল্লি ছিলেন। তাদের হালকা বাধা দিয়ে পুরানা পল্টন ও বিজয়নগরের দিকে বের করে আনা হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ থাকায় এই এলাকাতেই তাদের প্রতিরোধ করা হয়।তিনি বলেন, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে হিযবুত তাহরীর সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীও অংশ নেয়। পরে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে প্রকাশে কার্যক্রম শুরু করে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটি।
আজ শুক্রবার সংগঠনটি রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগিয়ে ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তারা প্রচারণা চালায়।
এ কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক বিবৃতি দিয়ে হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী নিষিদ্ধ ঘোষিত যেকোনো সংগঠনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হিযবুত তাহরীর যদি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ এই সংগঠনের তিনজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ এই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।